আমরা কোঁনো কাজ নানানভাবেই করতে পারি । বসে, শুয়ে, দাঁড়িয়ে নানানভাবেই খাওয়া যায় । কিন্তু মানুষ শুরু থেকেই বুঝেছে শুয়ে খাওয়ার চেয়ে বসে খাওয়া সহজ ও উত্তম । সুষম খাদ্য খাওয়া ভালো, অতিভক্ষণ স্বাস্থ্য ও কাজের জন্য ক্ষতিকর- এ বিষয়গুলো মানুষ আপনা-আপনি বুঝেছে, শিখেছে ও তা রপ্ত করেছে। এভাবেই চিন্তা ও কাজ করতে করতে মানুষ ঐ চিন্তা ও কাজ করার সাধারণ নির্দেশিকা বা করণীয় কর্তব্য নির্দিষ্ট করে তা পালন করে এগিয়ে গেছে । এই সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত ও সকলের নিকট গ্রহণীয় নিয়ম-পদ্ধতিকেই নীতি বলে । যখনই মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে চলা শুরু করেছে তখন থেকেই তারা তাদের মধ্য থেকে কাউকে নেতা বা প্রধান হিসেবে মেনেছে ও তার আনুগত্য করেছে । অন্যদিকে নেতা বা প্রধান তাদেরকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে দলীয় উদ্দেশ্য অর্জন বা স্বার্থরক্ষার চেষ্টা চালিয়েছেন। এভাবে সমাজ বড় হয়েছে, নানান সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে ও সেই সাথে ব্যবস্থাপনা কার্যও ততই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নেতা, প্রধান বা ব্যবস্থাপকগণ কিভাবে তাদের কাজগুলোকে সুন্দরভাবে সম্পাদন করবেন সে বিষয়ে নানান নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন । সকলের নিকট গ্রহণীয় ও উত্তম বলে প্রতিষ্ঠিত এরূপ নিয়ম-পদ্ধতিই পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনার নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
ব্যবস্থাপনা নীতি হলো ব্যবস্থাপনা কার্য সম্পাদনের সাধারণ পথ নির্দেশনা (Guidance for action)। দীর্ঘদিনে ব্যবস্থাপনা কার্য পরিচালনা করতে যেয়ে ব্যবস্থাপকগণ যে সকল নিয়ম-নীতি পালন করে এসেছেন তার মধ্য হতে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য বা সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত নিয়ম-নির্দেশিকাই ব্যবস্থাপনার নীতি হিসেবে গণ্য । একজন ব্যবস্থাপক যখন কিছু লোক নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালায় তখন অধস্তনদের মাঝে কাজকে ভাগ করে দিতে হয় । তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ও ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে । এতে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে । এভাবে কে কাকে নির্দেশ দেবে, কে কার নির্দেশ পালন করবে তা যদি ঠিক করে দেয়া না হয়, একজন কর্মীর একাধিক আদেশদাতা যাতে না থাকে এটা যদি নিশ্চিত করা না হয় তবে কাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়াই স্বাভাবিক । এভাবে অনেক নিয়ম-পদ্ধতির কথা বলা যাবে যেগুলো মেনে চললে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সকল ব্যবস্থাপক বা পরিচালকগণই ভালো ফল পেতে পারেন । তাই এ সংক্রান্ত নিয়ম-পদ্ধতি বা নির্দেশনাকেই ব্যবস্থাপনার নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় ।
ব্যবস্থাপনার কাজ বলতে পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয়, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজকে বুঝায় । এর প্রতিটা কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে পূর্ব নির্ধারিত কিছু সাধারণ নির্দেশিকা রয়েছে। যা পালন করা হলে প্রতিটা কাজে উত্তম ফললাভ সম্ভব । একইভাবে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা কার্যের ক্ষেত্রেও এরূপ পালনীয় নির্দেশিকা বা নীতিমালা থাকে। এরূপ নীতিমালা এমন নিয়ম-নীতিসমূহের নির্দেশ করে যা ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি সহজে ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পথনির্দেশক ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এরূপ নীতিসমূহ দীর্ঘ অনুশীলনের মধ্য দিয়ে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকে যা সর্বজনীনভাবে প্রয়োগযোগ্য ।
আরও দেখুন...